ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর বান্দরবানের রোয়াংছড়ির দেবতাখুমে ছুটে আসছেন পর্যটকেরা। দুর্গম এ পর্যটন স্পট পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠার মূল কারণ, এর বন্য সৌন্দর্য। ঘন বনে আচ্ছাদিত উঁচু পাহাড়, আর তার মাঝে বয়ে চলা স্বচ্ছ ঝরনার জলে ভেলায় চড়ে অন্য রকম অনুভূতিতে ভেসে যান পর্যটকেরা। এককথায় ট্রেকিং, অ্যাডভেঞ্চার আর ভেলায় চড়ার আনন্দ—সবই এক জায়গায়। প্রতিদিন শত শত পর্যটকের আগমনে স্থানীয় লোকজনেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে।
দেবতাখুমে গত শনিবার গিয়ে দেখা যায়, সবখানে পর্যটকের ভিড়। পর্যটকেরা কেউ বাঁশের ভেলায় চড়ে বেড়াচ্ছেন, কেউ নৌকায় ঘুরছেন, কেউ সাঁতার কাটছেন। দলে দলে কেউ আসছেন, কেউ ফিরে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে পাঁচ বছরের শিশুসন্তান নিয়ে বাঁশের ভেলায় চড়ে বেড়াচ্ছিলেন এক দম্পতি। তাঁরা বলেন, এ রকম পাথুরে গুহার জলে ঘুরে বেড়ানো ও উপভোগ করার নান্দনিক সৌন্দর্য দেশে আর কোথাও নেই।
দুই পাথুরে পাহাড়ের পাদদেশের মাঝখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ স্বচ্ছ জলধারার দেবতাখুম। রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে। বান্দরবানের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এক বছরের বেশি সময় ধরে দেবতাখুমে দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। ২২ জানুয়ারি থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রুমার বগালেক, কেওক্রাডং, রিঝুক ঝরনা ও থানচির গহিনে নিরাপত্তা সমস্যা থাকায় পর্যটকেরা এখন দেবতাখুমে ভ্রমণে বেশি আগ্রহী বলে স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন।
এলাকার পর্যটন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আলেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অংচিংনু মারমা জানিয়েছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার পর্যটক আসেন। দেবতাখুমে ঘুরে বেড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত বাঁশের ভেলা, নৌকা ও লাইফ জ্যাকেট রয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দেবতাখুমের সৌন্দর্য উপভোগের সময়সীমা রাখা হয়েছে।
দেবতাখুম পর্যটন আকর্ষণ ঘিরে লিরাগঁই (কচ্ছপতলী) বাজার ও শীলবান্ধাপাড়ায় চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁ ও আবাস গড়ে উঠেছে। ট্যুরিস্ট গাইডের সংগঠন হিল অ্যাডভেঞ্চারের সভাপতি উ চ ওয়াই মারমা বলেছেন, পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় কর্মহীন মানুষ কর্ম ফিরে পেয়েছেন। দেবতাখুমে পর্যটকদের সহযোগিতার জন্য ৭৫ থেকে ৮০ ট্যুরিস্ট গাইড কাজ করেন। এ ছাড়া দোকানি, ফল বিক্রেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পর্যটক আগমনে উপকৃত হচ্ছেন।
রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. পারভেজ আলী বলেন, দেবতাখুমে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা ও সেবা নিবিড় করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রতি ১০ জনে ১ জন ট্যুরিস্ট গাইড রাখা, নিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য কয়েক দিনের মধ্যে কচ্ছপতলী বাজার এলাকায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য পর্যটকদের তথ্য, কোন ট্যুরিস্ট গাইডের সঙ্গে কারা যাচ্ছেন—সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে।